মো: আজিমুদ্দিন জুলহাস

বয়ানদাতাঃ সুজন মিয়া (ছোট ভাই), তাফসির তাহসান নাঈম (ছেলে, ১৬ বছর)

দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে ছিল ২য়। ধুলাউড়ি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পর আর পড়াশুনা করা হয়নি। জুলহাসের পরিবার সচ্ছল ছিল, পারিবারিকভাবে তাঁতের ব্যবসাতো ছিলই সেইসাথে খাজনা জমির ইজারা থেকে আয় রোজগার হতো। জুলহাসই সংসারের দেখভাল করতো। ২০০৩ সালে আঁখি বেগমের সাথে তার বিয়ে হয়, কিন্তু বিয়ের বছরের মাথায় আঁখির সাথে জুলহাসের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এই ঘটনায় জুলহাস মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে, সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এসব থেকে ভুলে থাকার জন্য সে ২০১০ সালের দিকে ভাতিজা, মোঃ আজিমের সহযোগিতায় ঢাকার তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ নেয়। ভাতিজার সাথে তাজরীনের কাছেই এক বাসায় তারা থাকতো। জুলহাস ১২০০০ টাকা বেতনে কোয়ালিটি ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত ছিল। অগ্নিকান্ডের সময় ফ্যাক্টরীর ভিতর থেকে সে বাবাকে ফোন দেয়, ”বাবা, গেটে তালা, বের হওয়া যাচ্ছে না, আমি বোধহয় বাঁচবো না, দোয়া কর।এই তার শেষ কথা, তারপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়।  জুলহাসের চাচাতো বোন, শিউলি একই ফ্যাক্টরীতে আটকে পড়েছিল, সেও বাঁচতেও পারেনি। নিশ্চিন্তপুর স্কুলের বারন্দায় সারি সারি লাশের মধ্যে আজিম জুলহাসকে সনাক্ত করে, তার শরীরে কোন ক্ষতের দাগ ছিলনা, আটকে পড়া অন্যদের মতো সেও সম্ভবত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছে। ২৫শে নভেম্বর ২০১২ সালে ডহরজানি নতুন পাড়া কবরস্থানে জুলহাসকে দাফন করা হয়। ঘটনার মাসখানিক আগে কুরবানি ঈদে বাসায় এসেছিল, পরবর্তী মাসের বেতন পেয়ে সে একেবারে দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিল। বাবাকে নিয়ে কথা ঊঠলেই নাঈম অঝোর ঝারায় কাঁদতে থাকে।

2022 © All Rights Reserved | Designed and Developed by decodelab