মালেক
বয়ানদাতার নামঃ ফেলুসা বেগম মালা (স্ত্রী), মারুফ হোসেন (ছেলে)
মালেকের জীবন-প্রদীপ ২০ বছরের মাথায় তাজরীনের অগ্নিকান্ডে নিভে যায়। চার ভাইয়ের মধ্যে মালেক ছিল দ্বিতীয়, সম্ভবত ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তার মালার সাথে বিয়ে হয় এবং দুজনে একসাথে ঢাকায় চলে আসে। তাজরীনে ৩ বছর কাজ করেছে, শেষ পদ ছিল প্যাকার ম্যান। স্ত্রীসহ নিশিন্তপুরের তালতলায় লাল মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকতো।
২৪শে নভেম্বর মালা অসুস্থতার কারণে কাজে যায়নি। মালেক দুপুরে বাসায় খেতে এসেছিল, তখনই তার সাথে মালার শেষ দেখা। খাবারের সময় মালেক নিজ প্লেট থেকে মালার মুখে খাবার তুলে তুলে দিতে বলছিল, ”নাও, খাও, আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে এভাবে খাওয়াবে না।” মালার মা-বাবা ছিল না তাই হয়তো মালেক মজা করে এভাবে বলতো। সন্ধ্যার দিকে বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে আছে, এমনসময় পাশের বাসার ছেলেটা এসে বলে, ”কাকা, কোন কারখানায় কাজ করে”। ছেলেটার কাছে তাজরীনে আগুন লেগেছে শুনে মালা কারখানার দিকে ছুটে যায়, দালানজুড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমার কাছে ফোন ছিল না, মালেক অন্য কাউকে ফোন করতে পেরেছিল কিনা জানে না। পরেরদিন স্কুলের বারান্দায় পরনের প্যান্ট দেখে মালা মালেককে চিনতে পারে। চেহারা কালিতে কালো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু চেনা যায়। সেদিনই সরিষবাড়িতে পারিবারিক গোরস্থানে মালেককে দাফন করা হয়।
মালা বিচারের খবর কিছু জানে না, তবে বিচার হওয়াটা খুব জরুরী বলে মনে করে। ”বিচার হলে এই ধরনের আগুন লাগতো না, মানুষ স্বজনহারা হতো না।”