তাজরীনের জন্য ন্যায়বিচার - পটভূমি
২৪শে নভেম্বর ২০১২, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন গার্মেন্টেসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্যাক্টরি অগ্নিকান্ড ঘটে। এই অগ্নিকান্ডে ১১৭ জন শ্রমিক মৃত্যুবরন করেন, দেড় শতাধিকের বেশী শ্রমিক আহত হন, এখনো কয়েকজন নিখোঁজ আছেন। পরবর্তীতে ৪ জন গুরুতর অসুস্থ শ্রমিক মারা যান। তাজরীনের আগুন নেভাতে প্রায় ১৭ ঘন্টা সময় লেগেছিল। অগ্নিকান্ডের সময়ে নিরাপদে বের হওয়ার জন্য ফ্যাক্টরী বিল্ডিং এর বাহিরের দিকে যে ’ফায়ার এক্সিট’ থাকার কথা, তা তাজরীন গার্মেন্টসে ছিল না। বিল্ডিং এর তিনটি সিঁড়িই ভিতরের দিকে ছিল, তাছাড়া নিয়মবর্হিভূতভাবে নীচের তলায় নানা ধরনের দাহ্য জিনিস মজুদ করা ছিল, ফলে আগুন দ্রুত নীচ থেকে উপরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক যারা অগ্নিকান্ডের সময় ভিতরে ছিলেন তারা বলেছেন, আগুন লাগার পরপরই তৃতীয় তলার কেচি গেটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়, ফলে শ্রমিকরা বের হতে পারেনি, কেউ কালো ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, কেউ আগুনে পুড়ে, কেউ জীবন বাঁচাতে বিল্ডিং থেকে নীচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছেন। সর্বাধিক ৬৯ জন শ্রমিক ৩য় তলাতেই মারা যান।
গত এক দশক ধরে শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত আমরা কয়েকজন গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্রকার তাজরীনের ভুক্তভোগী শ্রমিক পরিবারের জন্য সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, মামলাটির কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং এই অগ্নিকান্ড বা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই প্রক্রিয়ায় আমরা নিহত, আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের জীবনকাহিনী লিপিবদ্ধকরন ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার যে ধারা তা নথিবদ্ধ করার কাজ করছি।
নিহত শ্রমিক পরিবারের মধ্যে স্বজন হারানোর ক্ষত এখনো দগদগে। একেক পরিবারের একেক রকম বেদনার কাহিনী। কিছু নিহত শ্রমিকের বাচ্চারা মা বা বাবাকে অকালে হারিয়ে অন্যের আশ্রয়ে বড় হচ্ছে। কোন নিহত শ্রমিকের মা তার অল্পবয়সী সন্তানকে হারিয়ে অপ্রকৃতস্থ হয়ে গেছেন। তবে একটি বিষয়ে নিহত শ্রমিকের পরিবাররা একইসুরে কথা বলেছেন, ’ক্ষতিপূরনের টাকা দিয়ে কি কখনো আপনজনের অভাব পূরণ হয়!’ নিহত শ্রমিকের পরিজনরা এই অপরাধের সুষ্ঠ ও দ্রুত বিচার চান, যেন কোনদিন এধরনের ঘটনা সংগঠিত না হয়, তারা বলেন, ‘গেটে তালা লাগায় দিয়া মালিকপক্ষ ওদের মাইরা ফেলছে’; তাদের দাবী, শ্রমিক যেন সমান অধিকার নিয়ে সুষ্ঠ ও নিরাপদ পরিবেশে এদেশে কাজ করতে পারে।
আমরা মনে করি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ইতিহাসে তাজরীন অগ্নিকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ইতিহাসের এই অধ্যায়কে লিপিবদ্ধ করার তাগিদ থেকে আমরা এই ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করেছি। তবে ওয়েবসাইট-এ তথ্য আপলোড করার কাজ এখনো চলমান এবং এটি একটা দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ। আমাদের প্রত্যাশা, প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে শ্রমিক জীবনের ইতিহাস লিখনের এই সামষ্টিক কাজে আপনিও অংশগ্রহন করবেন এবং তাজরীন অগ্নিকান্ডের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।