বিচারহীনতার এক দশক: ২০১২- ২০২২

বিচারহীনতার এক দশক: ২০১২- ২০২২

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের এক যুগ হবে ২৪ নভেম্বর ২০২২। দশ বছর আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর, এই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ১শ’ ১৭ জনেরও অধিক শ্রমিক পুড়ে মারা যান। আহত হন আরও অর্ধশতাধিক শ্রমিক। পরবর্ততীতে আহত শ্রমিকদের মধ্যে চার জন শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা দুঃখ-কষ্টে মৃত্যুবরণ করেন।
 

এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করার লক্ষ্যে ঘটনার পরপরই সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রতিটি অনুসন্ধানেই মালিক-কর্তৃপক্ষের শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে সার্বিক অবহেলার চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন’। এই প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় বলা হয়,


“তাজরিন ফ্যাশন লিমিটিড-এ সংঘটিত এই মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। যা দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগুন লাগার বিষয়টি নাশকতা হতে পারে, তবে এত বিপুল মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য মালিকের অমার্জনীয় অবহেলাই দায়ী। এটি সুস্পষ্ট ভাবে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অপরাধ। তাই তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড এর মালিককে দন্ড-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করার সুপারিশ করা হলো।”

-আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশন লিমিটিডে সংঘটিত মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন, ১৭ ডিসেম্বর ২০১২, পৃ: ৪০।


এই পরিপ্রেক্ষিতে মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করা হয়। একটি মামলা দায়ের করেন একজন নিখোঁজ শ্রমিকের ভাই। আশুলিয়া থানার পুলিশ বাদী হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করে। আশুলিয়া থানার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তিন জন। আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল, সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনসুর আলী মন্ডল, সিআইডি পুলিশ-এর পরিদর্শক এ কে এম মহসীনউজ্জামান খাঁন। তারা ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর, ৩২৩/৩২৫/৪৩৬/৩০৪/৩০৪-ক/৪২৭ (দ) বিধিতে সিএমএম কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সাক্ষী ১শ’ ৪জন।


পরবর্তীতে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মালিক মো. দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয় এবং সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে এই সাত বছরে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সর্বমোট ৪৬টি তারিখ ধার্য ছিলো। এই ৪৬ দিনের মধ্যে মাত্র ৯ দিন রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির ।

এই এক দশক আমরা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত কয়েকজন গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্রকার তাজরীন মামলাটির কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। বিচার প্রক্রিয়াটিকে আমাদের প্রতিবাদী নজরদারিতে রাখার তাগিদ থেকে প্রত্যেকটি সাক্ষ্য-শুনানিতে উপস্থিত থেকেছি। বছরের পর বছর আদালতে আসা-যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা মনে করি, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে মামলাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের দায়সারপনাই দায়ী।


কারখানার মালিক ও  দৈনন্দিন পরিচালনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের শ্রমিক নিরাপত্তার প্রশ্নে অবহেলার কারণে ১শ’ ১৭ জনেরও অধিক শ্রমিক জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলো, কিন্তু দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে রাষ্ট্রপক্ষের যে অবহেলার চিত্র আমরা পর্যবেক্ষণ করলাম তা এই বিচার ব্যবস্থার শ্রেণিচরিত্রেরই পরিচায়ক। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষ মামলার সাক্ষী, তাজরীনের ভুক্তভোগী শ্রমিকদের সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহার কথা বলেছেন। তবে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, এ অনীহা এই ব্যবস্থার সাথে শ্রমিকের শ্রেণিগত দূরত্বের স্মারক। নিহত শ্রমিকের আত্মীয়-পরিজনকে আমরা অনেক সময় বলতে শুনেছি, “বড়লোকের আদালতে গরিবের জীবনের কি দাম আছে, কিসের বিচারের আশা! মালিকের কি বিচার হয়?” একই উপলব্ধি থেকে নিখোঁজ শ্রমিকের ভাই তার দায়ের করা মামলাটি থেকে বিচারের আশা ছেড়ে দেন। তাদের এই প্রবঞ্চনার বোধের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা আরও যুক্ত করতে চাই যে, মালিকশ্রেনির/কর্পোরেটশ্রেণির অপরাধ (যেমন, কারখানার পরিচালনায় অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রমিকের মৃত্যু, মজুরি চুরি, ট্যাক্স ফাঁকি) চিহ্নিত করা এবং এ ধরনের অপরাধের বিচার করার জন্য এই ব্যবস্থা অপ্রস্তুত এবং অপারগ।


মালিকশ্রেণির অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে অনুশীলিত রাষ্ট্রপক্ষের দায়সারাপনাকে নিম্নে বর্ণিত সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত চিত্র জলের মতন স্পষ্ট করে:

অক্টোবর ৪, ২০২২: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

আগস্ট ২৮, ২০২২: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জুন ২১, ২০২২: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

মে ১৮, ২০২২: তাজরীনের দুজন শ্রমিক মিরাজুল ও হালিমা সাক্ষী দিতে আদালতে হাজির হন। বিচারকার্য চলাকালীন সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দুই জন সাক্ষী হাজিরার কথা বিচারককে অবহিত করে জানতে চান, আজ সাক্ষ্য শুনানি হবে কিনা? বিচারক মহোদয় বলেন, “এই মামলায় সাক্ষী এমনিতেই গরহাজির! আজ যেহেতু দুজন উপস্থিত হয়েছেন, অবশ্যই শুনানি হবে।”

এই মামলার ১৩ জন আসামির মধ্যে প্রধান আসামী কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহামুদা আখতারসহ ৯ জন আসামীর উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। [একজন আসামী মামলা বিচারাধীন কালে মারা যান।] বিচারক মিরাজুলকে সাক্ষ্য দিতে আগে কাঠগড়ায় ডাকলেন এবং হালিমাকে বিচার কক্ষের বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি মিরাজুলকে নাম ও ঠিকানা বলতে বললেন। তারপরে জিজ্ঞেস করলেন, সেদিনের [তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের দিনের] ঘটনা সম্পর্কে কি জানেন? মিরাজুল বলতে শুরু করলে, বিচারক মহোদয় বুঝতে পারলেন কোথাও ভুল হচ্ছে। কারন সাক্ষী নিজের নাম বলছেন, মিরাজুল আর বিচারক মহোদয় বলছেন সিরাজুল। এই বিভ্রাটের কারনে মিরাজুলের সাক্ষ্য গ্রহণ সাময়িক বন্ধ রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে নাম সংশোধন করে অপর সাক্ষী হালিমাকে বিচারকক্ষে ডাকা হলো।

হালিমা বিচারকের ডানদিকে লালসালুতে মোড়ানো কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ালেন। তাকে শপথনামা পড়ানো হলো, “যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না।” এবার আরেক বিভ্রাট। হালিমাকে আসামী পক্ষের [ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের] যেই আইনজীবী জেরা করবেন তিনি অন্য মামলা পরিচালনার কাজে আরেকটি কোর্টে আছেন। সেই আইনজীবীর অপেক্ষায় হালিমাকে আবার বিচারকক্ষের বাইরে পাঠানো হয়।

বিচারকের নির্দেশে লাইন সুপার ভাইজার মিরাজুল শপথনামা শেষ করে নিজের নাম ঠিকানা বলেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারখানার মালিক দেলোয়ার স্যার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারখানায় ছিলেন। বিভিন্নজনের সাথে মিটিং করেছেন। তিনি চলে যাওয়ার পর ঐদিন সন্ধ্যা ৬ থেকে ৭টার মধ্যে আগুন লাগে। আমি ৫ তলায় নিজের লাইনে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ নিচের ফ্লোর থেকে আগুন আগুন চিৎকার, চিল্লা-চিল্লি শুনতে পাই। সাথে গরম ধোঁয়া। ফ্লোরের সবাই বুঝে ফেলে আগুন লাগছে। আমি সবাইকে বলি যে যার মত বাঁচতে চেষ্টা কর। ততক্ষণে ধোঁয়ার সাথে আগুন ৫ তলায় পৌঁছে গিয়েছে। [এখন] জালনা দিয়ে লাফ দিয়ে জীবনের পঙ্গু” (ঝুলে থাকা ভাঙা হাত দেখিয়ে বলেন)।  

মিরাজুলের সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ দিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী মহোদয় আদালতে ফিরে আসলেন। হালিমাকে আবার ডাকা হলো। হালিমা তিন তলায় কোয়ালিটি ইনস্পেক্টরের কাজ করতেন। যথারীতি বিচারকের নির্দেশে নাম ঠিকানা বলার পর, একই প্রশ্নের জবাবে হালিমা জানান, আগুন লাগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর, সময় আনুমানিক পৌনে ৭টা। তিনি বলেন, হঠাৎ নিচের দিক থেকে হৈ চৈ শুনতে পাই। আমরাও আতঙ্কের মধ্য জানতে চাই কি হইছে? উপস্থিত ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আমাদের বলেন, “কিছু হয় নাই, সব ঠিক আছে, তোমরা কাজ কর”। আমরা কাজ চালু রাখি। এর মধ্যে আগুন আগুন চিৎকার আরও বাড়তে থাকে। ধোঁয়ার সাথে আগুন আমাদের ফ্লোরের সিড়ি দিয়ে দাও-দাও করে উপরে ধেয়ে আসতে থাকে। চারদিক ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। নিচে নামতে গিয়ে গেট তালাবন্ধ পাই। সবাই বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার দিয়ে যে যার মত বাঁচতে চেষ্টা করি। আগুনের তাপ আর ধোঁয়ায় জ্ঞান হারাবার মতন পরিস্থিতি। সবাই মিলে জানালা ভেঙে নিচে লাফ দেই, জীবনটা বাঁচে, কিন্তু চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাই।

এবারে ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের পক্ষে তার আইনজীবী জেরা করা শুরু করেন [যেটি ছিলো প্রায় হুংকারসম]। “ আপনি মিথ্যা সাক্ষী দিচ্ছেন! এখানে কখন এসছেন? কার কার সাথে কথা বলেছেন? আগে কখনো এখানে [আদালতে] আসছেন? কার কার সাথে আলোচনার ভিত্তিতে মিথ্যা সাক্ষী দিলেন?”

অক্টোবর ২৭, ২০২১: কোভিডজনিত দীর্ঘ স্থিতাবস্থা শেষে সাক্ষ্য শুনানির শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবি আব্দুল বাসেত মজুমদারের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে, আদালতের সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১: কোভিড মহামারীজনিত সাধারণ ছুটি থাকায় আদালত বসেনি। 

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। আদালতে উপস্থিত আহত শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে মালিককে বলতে শোনা যায়, “টাকা দিয়ে সাংবাদিক নিয়ে আসবো, প্রমাণ করবো যে উপস্থিত শ্রমিকরা কেউ আমার কারখানার না।” উপস্থিত শ্রমিকগণ আদালতপাড়ায় এই উস্কানিতে আক্রান্ত বোধ করলেও সাড়া দেয়নি।

জানুয়ারি ১৩, ২০২১: প্রায় দেড় বছর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ উল্লেখ করে আসামি পক্ষের উকিল মামলা খারিজ করার জন্য মৌখিকভাবে আবেদন করলে আদালতে উপস্থিত শ্রমিকদের একজন বলেন, “মহামান্য আদালত আমরা সাক্ষী কিনা জানি না, কিন্তু আমরা তাজরীনের আহত শ্রমিক, শুনানির খবর পেয়ে এসেছি, আমরা সাক্ষ্য দিতে চাই।” বিচারক তাদের উপস্থিতি আমলে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিকে সাক্ষ্য তালিকায় উপস্থিত শ্রমিকদের নাম আছে কিনা যাচাই করতে বলেন। উপস্থিত শ্রমিকদের মধ্যে একজনের নাম তালিকায় পাওয়া গেলে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মালিকপক্ষের উকিলসহ আসামী ও অন্যান্যরা উপস্থিত শ্রমিকদেরকে এজলাসের বাইরে ও ভেতরে নানা ভাবে হয়রানি করেন।

অক্টোবর ১৫, ২০২০: বিচারক অনুপস্থিত থাকার কারণে আদালত বসেনি। অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের অনেকে যারা গত ৩৪ দিন যাবৎ সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন, তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

মার্চ ৩১, ২০২০: কোভিড মহামারীজনিত সাধারণ ছুটি থাকায় আদালত বসেনি। 

জানুয়ারি ৩০, ২০২০:  বিচারক উপস্থিত না থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।

নভেম্বর ৭, ২০১৯: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারে নাই। তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন জব্দ করা পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে যে আবেদনটি করেছিলেন তা আমলে নিয়ে শুনানি শেষে শোনা যায়, বিচারক এমন আদেশ দিয়েছেন যে মো. দেলোয়ার হোসেন তার সন্তানদের পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার শর্তে নিজের পাসপোর্ট ফেরত পাবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট মালিকের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর সহকারি তাৎক্ষনিকভাবে আদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানালেও, পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. মুর্শিদ উদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার অন্যতম আসামি প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারের জব্দ পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদন করেন তাদের আইনজীবী। তবে বিচারক এ বিষয়ে এখনও কোনও আদেশ দেয়নি।’ (তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ড, পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ ২০ জানুয়ারি; বাংলা ট্রিবিউন, ৭ নভেম্বর ২০১৯)।

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

অগাস্ট ৪, ২০১৯: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জুন ২৫, ২০১৯: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

মে ৮, ২০১৯: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করে এবং সেই আবেদন গৃহীত হয়। প্রধান অভিযুক্ত কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে যে আবদেন করেছিলেন সে বিষয়ে বিচারক বলেন, এটি তার এখতিয়ারের বাইরে এবং তিনি আসামীকে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে বলেন।

এপ্রিল ৭, ২০১৯: রাষ্টপক্ষ সাক্ষী হাজির করে নাই। তবে অভিযুক্ত মালিকের জব্দকৃত পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে করা আবেদনের বিষয়টি উত্থাপিত হয়, আদালত এ বিষয়ে আদেশ পরবর্তীতে দিবেন বলে জানান।

মার্চ ৭, ২০১৯: প্রায় দুই বছর পর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করে। সাক্ষ্য দেন সাভার থানার এস আই আবিদ হোসেন। তিনি ঘটনাস্থলে পাওয়া শ্রমিকদের লাশের সুরতহাল তৈরি করেছিলেন।

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯: বিচারক ছুটিতে ছিল বলে আদালত বসেনি।

নভেম্বর ২৭, ২০১৮: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

অক্টোবর ১৬, ২০১৮: বিচারক পূজার ছুটিতে থাকায় আদালত বসেনি।

সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জুলাই ৩০, ২০১৮: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। ২০১৩ সালের  ১৯ মে, উচ্চ আদালতের এক আদেশের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত তাজরীন কারখানার মালিক মো. দেলোয়ার হোসেনের পাসর্পোট জব্দ ও তার বিদেশ ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। অভিযুক্ত মালিকের আইনজীবীরা এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য আদালতে একটি আর্জি পেশ করেন।

জুন ২০, ২০১৮: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। জামিনে থাকা তিনজন আসামী হাজিরা দেয়নি বলে তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আদেশ দেন আদালত।

এপ্রিল ২২, ২০১৮: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮: ঢাকা বারের নির্বাচনের কারণে আদালত বসেনি।

জানুয়ারি ১১, ২০১৮: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে পারছেন না, এই মর্মে একটা দরখাস্ত আদালতে জমা দেন ।

নভেম্বর ৮, ২০১৭: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

অক্টোবর ৮, ২০১৭: আসামি পক্ষের প্রধান উকিল মারা যাওয়াতে তারা পরবর্তী শুনানির তারিখ ৩ মাস পরে দেয়ার আবেদন করে।

অগাস্ট ১৩, ২০১৭: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জুলাই ৭, ২০১৭: একজন সাক্ষী হাজির হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কিছু পুড়ে যাওয়া কাপড়, কয়লা, কাগজপত্র মামলার তদন্তের জন্য আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেছিল। এই জব্দ তালিকায় সাক্ষী হিসেবে সই করেছিলেন উপস্থিত সাক্ষী।

মে ১৪, ২০১৭: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

এপ্রিল ২, ২০১৭: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জানুয়ারি ২৯, ২০১৭: আদালতে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের একজন আহত শ্রমিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ, আসামিপক্ষের সকল উকিলের কটাক্ষ উপেক্ষা করে তিনি তার বয়ান দেন। বারবার নানাবিধ অযৌক্তিক প্রশ্ন করে তার বয়ানকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হলেও তিনি তার বক্তব্যে অটল ছিলেন।

নভেম্বর ১৩, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

আগস্ট ১৩, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জুলাই, ১১, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জুন ৫, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

মে ৮, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

এপ্রিল ১০, ২০১৬: অগ্নিকাণ্ডের দিন কারখানায় কর্মরত দুই জন শ্রমিক সাক্ষ্য প্রদান করেন।

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

জানুয়ারি ১০, ২০১৬: একজন সাক্ষী হাজির হয়। এই মামলার মূল বাদী, আশুলিয়ার থানার তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে তার সাক্ষ্য দেন। তার সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নভেম্বর ১, ২০১৫: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

অক্টোবর ১, ২০১৫: রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

আমরা মনে করি, সাক্ষী হাজির না করে মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রিতার পথ বেছে নেয়া বিচার প্রার্থী ভুক্তভোগী শ্রমিক, তাদের স্বজন এবং সহযোদ্ধাদের বিচারের দাবিকে নিষ্প্রভ করা, আমাদের সকলকে হতোদ্যম করে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে নির্মমভাবে শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মামলাটিতে আমাদের প্রতিবাদী নজর বহাল থাকবে ।

গামী শুনানির তারিখ জানুয়ারি ১, ২০২৩ মরা থাকব, আপনরা আসছেন তো?   

drik-logo
wave-image
2022 © All Rights Reserved | Designed and Developed by decodelab