তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড
তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে কতজন শ্রমিক পুড়ে মারা গিয়েছেন তা সুর্নিদ্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। সরকারি হিসাব’মতে ১১২জন কিন্তু যেহেতু আগুনের লেলিহান শিখায় দেহ থেকে মাংস ঝলসে গিয়েছিলো, বহু পরিবার-পরিজন পোড়া হাঁড়গোড় আর কঙ্কাল দেখে আপনজনকে চিনতে পারেনি। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন, ২৫ নভেম্বর নিশ্চিন্তপুর প্রাইমারী স্কুল মাঠ থেকে ৬২টি অসনাক্তকৃত লাশ আনজুমান মফিদুল ইসলামের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে আসা হয়। এখানে ঢাকা জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ৭টি লাশ নিহত শ্রমিকের পরিবার বুঝে নেয়। এই মর্গ থেকে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডি.এন.এন প্রোফাইলিং সেন্টারের তিনজন মেডিকেল টেকনলোজিস্ট ৫৯টি লাশ হতে ডি.এন.এ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে এবং ‘বেওয়ারিশ লাশগুলো’কে এই স্যাম্পল সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় নম্বর দেয়া হয়। এই নম্বরের ভিত্তিতে ৫৫টি লাশ ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে কবর দেয়ার জন্য নেয়া হয়। ২৭ নভেম্বর গোরস্থান থেকে দুটি পরিবার তাদের স্বজনের লাশ জেলা প্রশাসকের কাছ হতে বুঝে নেয়। জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে ৫৩টি নাম পরিচয়হীন শ্রমিকের লাশ কবর দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডি.এন.এ টেস্টের মাধ্যমে ৩৭টি কবর চিহ্নত হয়, পরবর্তীতে একই পদ্ধতিতে আরও ৪জন নিখোঁজ শ্রমিকের কবর সনাক্ত হয়। সরকারি হিসেবেই জুরাইন গোরস্থানে এখনও ১৩টি অসনাক্তকৃত কবর আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এখানে উপস্থাপিত তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ কিংবা প্রশ্নের উর্ধ্বে বলার সুযোগ নেই। কারখানার মালিক-বিজিএমইএ-সরকারের উচিৎ ছিল জরুরি ভিত্তিতে মৃতের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা।কিন্তু ‘বেওয়ারিশ লাশ’ সনাক্ত করার জন্য ডি.এন.এ ‘টেস্ট’কে পদ্ধতি হিসেবে বাছাই করার ফলে তাজরীনের মালিককে সে দিনের শিফটে কতজন শ্রমিক, কারা কারা কাজ করছিলেন, এই তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা থেকে সুকৌশলে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নিহতের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধানে মালিক-বিজিএমইএ-সরকারের এই ব্যর্থতা শাস্তিযোগ্য অবহেলার (criminal negligence) শামিল।