![](https://justicefortazreen.com/assets/backend/images/post/6u2QLTprUF.jpg)
মর্জিনা খাতুন
বয়ানদাতার নামঃ আব্দুস সাত্তার (স্বামী), মোঃ মনসুর আলী (বড় ছেলে)
মর্জিনা ৫ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল, লেখাপড়া করার সৌভাগ্য হয়নি, শুধুমাত্র স্বাক্ষর জ্ঞান টুকু ছিল, মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ৪৫ বছর। সাত্তারের ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কোন জমিজামা ছিলনা। ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে চরম অর্থ কষ্টের মধ্যে তারা দিনাতিপাত করতো, শেষমেষ ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ২০১০ সালে ঢাকায় আসে। আব্দুস সাত্তার নিশ্চিন্তপুরের ফুটপাতে ছোট-খাট ব্যবসা করতো। সাত্তারের এক ভাইয়ের মাধ্যমে মর্জিনা তাজরীন গার্মেন্টসে হেলপার হিসাবে কাজ নেয়, পরে অপারেটর হয়েছিল। ফ্যাক্টরীর কাছেই জাহাঙ্গীর উকিলের বাসায় তারা ভাড়া থাকতো।
২৪শে নভেম্বর, সাত্তার সন্ধ্যাবেলায় বাসার সামনে লিটনের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাবে বলে দাঁড়িয়েছে, এমনসময় একজন নারী দোকানের সামনে দিয়ে দৌড়ে যেতে যেতে বললো, ”তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন লাগছে..” একথা শুনে সাত্তার চায়ের কাপ রেখে দৌড়ে তাজরীনের দিকে ছুটে গেলো। সাত্তারের কাছে ফোন ছিল না। কারখানার সামনে শত শত মানুষের ভীর, আর স্বজনদের আহাজারি। মর্জিনা খাতুনকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না, দুইদিন পর ২৬শে নভেম্বর, সাত্তার ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মর্জিনাকে খুঁজে পাই, পা পুড়ে গিয়েছিল। মর্জিনার পেটে দুইবার অপারেশনের কাটা দাগ দেখে সাত্তার তাকে চিহ্নিত করে। সেইদিন গ্রামে ফিরে আসে, রাতেই এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়। ২৪শে নভেম্বর দুপুরের খাবারের সময় মর্জিনার সাথে সাত্তারের শেষ দেখা, বাসায় ঢুকে নামায পড়ে খেতে বসে জিজ্ঞাসা করেছিল সাত্তার খেয়েছি কিনা। মর্জিনার মত হাসি-খুশি মানুষ পুরো এলাকায় ছিল না, তার মুখের স্মৃতি আজও ভুলতে পারে না সাত্তার।
গ্রামে থাকায় তাজরীনের বিচার কার্যক্রম নিয়ে কেন খোঁজ খবর রাখতে পারে না, তবে অবশ্যই বিচার চাই। যারা তালা লাগিয়ে এতগুলো মানুষকে মেরে ফেললো, তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে, এটাই তার শেষ দাবী।