রফিকুল ইসলাম

বয়ানদাতার নামঃ  রিয়া মনি (মেয়ে, ১৭)

পরিবারের সদস্যঃ রোচনা বেগম (স্ত্রী), রিয়া মনি (মেয়ে, ১৭), রাতুল বাবু  ছেলে, ১১)

রফিকুল ভাই বোনের মধ্যে ৩য়, জায়গীরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। ২০০০ সালের দিকে তার রোচনা বেগমের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পার হওয়ার পর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়, রফিকুল আদর করে তাই মেয়ের নাম রেখেছিলরিয়ামনি সংসারের অথনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল না, নিজস্ব জমি-জামা না থাকায় অন্যের জায়গা লিজ নিয়ে রফিকুল মেকানিকস এর দোকান দেই। লিজ শেষে মালিক দোকান ফেরত নিয়ে নিলে সে বেকার হয়ে পড়ে, তাই কাজের সন্ধানে ২০০৯ সালে ঢাকায় চলে আসে। তার ছোট চাচা আগে থেকেই আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতো, তার সূত্র ধরে রফিকুল তাজরীনে অপারেটর হিসাবে যোগ দেয়, রোচনা অন্য গার্মেন্টসে কাজ করতো। রিয়া ঐসময় নানীর সাথে দেশে থাকতো, রফিকুল রিয়ার জন্য একটা টিভি কিনে দেয় যাতে সে বাসায় বসেবোরনা হয়ে যায়। সে টিভিটা এখনো আছে, বাবার ব্যবহ্রত গ্লাসটাও সে সযতেœ রেখে দিয়েছে। অগ্নিকান্ডের এক মাস আগে রিয়া মা-বাবার সাথে তাজরীনের কাছেই এক বাড়িতে থাকতো।

ঘটনার দিন, রিয়া শুনতে পাই সবাই বলাবলি করছে তাজরীনে আগুন ধরছে, রিয়ার বয়স তখন মাত্র বছর। রোচনা সেসময় কয়েক মাসের পোয়াতি। বাসায় রিয়া একা, মা অন্য গার্মেন্টসে ডিউটিতে রয়েছে। সে জানতোবাবা তাজরীনে কাজ করে’, অগ্নিকান্ডের কথা শুনে সে কান্নাকাটি শুরু করে। পাশের বাসার এক আন্টি রিয়াকে তার বাসায় নিয়ে যায়, বারবার বলতে থাকেতোমার আব্বু চলে আসবে ১০ বছর পরে রিয়ার মনে হয়, অনেকের বাবাইতো সেদিন ফিরছিল, শুধু আমার বাবাই ফিরে নাই। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, এখনো কারোর সামনে বের হয়না, নিজের ঘরটাতেই সারাদিন থাকে।

সেদিন বাবা যখন দুপুরের খাবার জন্য বাসায় এসেছিল ততক্ষনে রিয়া খেয়ে ফেলেছে। তারপরও বাবা রিয়াকে তার কাছে বসিয়ে খাইয়েছে আর জিজ্ঞাসা করেছিল, ”তোমার কি খেতে ইচ্ছে হয় বলো, আমি ফেরার পথে নিয়ে আসবো।বাবার সাথে সেটা ছিল রিয়ার শেষ দেখা। রিয়া জানে না কে কিভাবে বাবাকে সনাক্ত করেছিল, তবে তার মন্টু চাচা হয়তো বলতে পারবে। তাজরীনের বিচারের খবর কার কাছে কি ভাবে নেবে তা রিয়া জানে না, তবে তার খুব জানতে ইচ্ছা করে। ক্ষতিপূরনের টাকা পেতে কোন অসুবিধা হয়নি। টাকা দিয়ে বাড়ীটা বানানো হয়েছে, ঘরের জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। কিছু টাকা রোচনা, রিয়া রাতুলের নামে ব্যাংকে জমা আছে। টাকা দিয়ে কি জীবনের ক্ষতিপূরণ হয়! রিয়া বলে, ”টাকা না দিয়ে যদি কেউ আমার বাবাকে ফেরত দিত, আমি বাবা ডাকতে পারতাম, বাবার ডাক কোটি টাকায় কেনা যায় না!” রাতুল তার বাবাকে দেখেনি, তার কোনদিন কাউকেবাবাডাকা হবে না।

2022 © All Rights Reserved | Designed and Developed by decodelab