তোফায়েল আহমেদ
বয়ানদাতার নামঃ রাকিবুল ইসলাম (ছেলে)
তোফায়েল আহমেদ ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত সালমারা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা করেছে। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে তোফায়েল ছিল ৪র্থ। রুপালী বেগমের সাথে ষোল বছরের বিবাহিত জীবন তার দুটি সন্তান আছে, রাকিবুল ও তাহমিনা, দুজনেই বর্তমানে মাদ্রাসায় পড়াশুনা শেষ করেছে। তোফায়েল অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে কোনরকমে তার অভাবের সংসার চালানোর চেষ্টা করতো। তার এক ভাগ্নে (শাহ আলম) ও এক প্রতিবেশী (আশিকুর রহমান) ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করতো, তাদের সূত্র ধরে ২০০৮ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকার আশুলিয়ায় আসে। জীবনের শেষ তিন বছর তাজরীন গার্মেন্টসে অপারেটর হিসাবে কাজ করেছে। শাহ আলমের সাথে তাজরীনের কাছেই এক বাসাতে সে থাকতো।
২৪শে নভেম্বর সন্ধ্যায় মাগরিবের সময়, যখন আগুন ধরে, তখন তোফায়েল ছেলেকে ফোন করেছিল। রকিবুল ফোন ধরে ”হ্যালো, হ্যালো...” করেছে, বাবা কথা বলেনি, এরপর রকিবুল অনেকবার বাবাকে ফোন করেছে, রাত ২টা পর্যন্ত তোফায়েলের ফোন রিং হয়েছিল, কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি। পরেরদিন শাহ আলম স্কুলের মাঠে সারি সারি শায়িত লাশের মধ্যে তোফায়েলকে চিহ্নিত করে, তখনও তোফায়েলের হাত ভাজ করা অবস্থায় মোবাইল ফোন ধরা ছিল, শরীরে কোন অংশ পোড়েনি, শুধু কালো ধোঁয়ায় শরীরে কালিমা পড়েছিল, কারখানার অন্য অনেক শ্রমিকের মত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে হয়তো সে মারা গেছে। দুঃসর্ম্পকের মামাতো ভাই পলাশও তাজরীনে মারা গিয়েছিল, দুজনের লাশই একসাথে গ্রামে আনা হয়েছিল, ২৫শে নভেম্বর নিজস্থ কবরস্থানে তোফায়েলকে দাফন করা হয়। কবর দেয়ার সময়ও ভাজ করা হাত সোজা করা যায়নি। ঘটনার মাসখানিক আগে তোফায়েল কুরবানি ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছিল, তখন রাকিবুল বাবাকে গার্মেন্টেসের কাজ ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে আসতে বলেছিল, এখানেই ব্যবসা-পাতি করতে অনুরোধ করেছিল, তোফায়েল তাতে রাজীও হয়েছিল। বাবার স্মৃতি রাকিবুলকে কষ্ট দেই, তাই তোফায়েলের ব্যবহ্রত সব জিনিস ওরা মানুষকে দান করে দিয়েছে। তোফায়েল পরিবার এই ঘটনার বিচার চাই যেন পুনরায় কোন কারখানায় এরকম না ঘটে, অকালে কেউ যেন তার প্রিয়জনকে এরকম নির্মমভাবে না হারায়।