মাহমুদা বেগম
বয়ানদাতার নামঃ মোঃ রাসেল মিয়া (ছেলে)
পরিবারের সদস্যঃ মোঃ রাসেল মিয়া (ছেলে), লিজা আক্তার (মেয়ে), লিয়াকত (স্বামী)
রাসেলদের সারাজীবনই অভাবের মধ্যে কেটেছে, লিয়াকত সংসারের খোঁজ-খবর রাখতো না। পরিবারের সবাই যখন যে কাজ পেতো সেটাই করতো। মাহমুদা বাসা বাড়ীতে কাজ করতো, রাসেল ১২ বছর বয়সে ট্রাকের হেলপারের কাজ নিয়ে লালমনিরহাট চলে যায়, লিজা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ নেয়। লিয়াকত কি কাজ করে সে সন্বন্ধে কারোর কোন ধারনা নেই। তাজরিন অগ্নিকান্ডের এক বছর আগে মায়ের সাথে রাসেলের শেষ দেখা, তখন মাকে বলেছিল ”মা, আমি তোমার কাছে চলে আসবো না, আর একা থাকবো না।”
দুই ভাই-বোনের মধ্যে মাহমুদা ছিল ছোট, ১২-১৩ বছরের মাথায় বিয়ে হয়ে যায়। ২০০৮ সালের দিকে গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য ঢাকায় আসে, তাজরীনের কাছেই বুড়ি পাড়ায় থাকতো। অগ্নিকান্ডের পরেরদিন বাবা ফোন করে জানায় ”মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তুই আমার কাছে চলে আয়।” রাসেল তখন রংপুর ছিল, সে তৎক্ষনাত ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সকালে ঢাকায় পৌঁছানো মাত্র বাবা আবার ফোন করে জানায় ’মাকে খুঁজে পাওয়া গেছে’, তারা মাকে গ্রামের বাড়ী নিয়ে যাচ্ছে। ফোন না থাকায় অগ্নিকান্ডের সময় মাহমুদা কাউকে ফোন করতে পারেনি, হাতের চুড়ি দেখে মাহমুদার লাশ চিহ্নিত করা হয়। প্রথম ক্ষতিপূরনের টাকা লিয়াকত নয়ছয় করেছে, ছেলেমেয়ে বা মাহমুদার বাবা-মাকে কিছু দেয়নি। লিয়াকত বলেছিল তাদের কোন ছেলেমেয়ে নেই, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়, শেষপর্যন্ত রাসেল, লিজা ও মাহমুদার নামে আলাদা করে চেক জমা হয়। সেই টাকা দিয়ে রাসেল ছোট একটা জমি কিনেছে, পরে নিজে ও তার স্ত্রীর কষ্টার্জিত সঞ্চয় দিয়ে সেই জমিতে ছোট একটা বাড়ি তুলেছে। মায়ের কথা বলতে গিয়ে রাসেল অশ্রুসজল হয়ে পড়ে, ”মায়ের এরকম হবে জানলে অনেক আগে মাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসতাম..”