মরিয়ম বেগম
বয়ানদাতার নামঃ আল আমিন মোল্লা (স্বামী)
মরিয়মের বাড়ী ভোলা জেলায়। তারা ২ ভাই এবং ৪ বোন, মরিয়ম ভাই-বোনদের মধ্যে ৪র্থ। ২০১১ সালের দিকে কোন একসময় সে রাগ করে বাড়ী থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। আশুলিয়া এলাকায় এক গামেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ নেয়। কিছুদিন এখানে কাজ করার পর তাজরিন গামেন্টস ফ্যাক্টরীতে যোগদান করে। তাজরিনের প্রায় গাঁঘেষে ছিল আল আমিন মোল্লার মেকানিকস এর দোকান। আসা-যাওয়ার পথে আল আমিনের সাথে মরিয়মের পরিচয় হয়, তারপর বিয়ে। তাজরিন গামেন্টস এর ঠিক উল্টোদিকে তারা বাসা ভাড়া করে থাকতো।
২৪শে নভেম্বর ২০১২ সালে যখন আগুন লাগে, তাজরিনে তার চাকুরী জীবনের এক বছরও পার হয়নি। প্রতিদিনকার মত সেদিনও মরিয়ম ভোর ৫টায় উঠে রান্না-বান্না ও অন্যান্য কাজ সেরে আল আমিনসহ সকাল ৭.৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সেটাই দুজনের শেষ দেখা। মরিয়ম তাজরীনে যায়, আল আমিন দোকানের দিকে রওনা দেয়। তাজরিনে হাজিরা দেয়ার সময় সকাল ৮টা। ফ্যাক্টরির কাছে বাসা থাকায় ৫ মিনিটের মধ্যে পোঁছে যেতো।
সন্ধ্যার দিকে, মাগরিবের নামাজের সময়, আল আমিনের ফোনে মরিয়মের কল আসে। আল আমিন ফোন ধরতেই মরিয়ম চিৎকার করে বলে,
“আগুন লাগছে, ফ্যাক্টরীর ভিতর আগুন লাগছে.. “
তারপর ফোনটা বন্ধ হয়ে যায়। আল আমিন দোকান থেকে ছুটে বের হয়ে তাজরিনের সামনে আসে, ইতিমধ্যে অনেক লোক রাস্তায় এসে জড়ো হয়েছে। গেট বন্ধ দেখে আল আমিন ফ্যাক্টরীর পিছন দিকে ছুটে যায়। এভাবে কয়েকবার সামনে-পিছনে দৌড়াদৌড়ি করার পর, একসময় ফ্যাক্টরীর উত্তরদিকে কয়েকটা অসার শরীর পড়ে থাকতে দেখতে পায়। পাশ থেকে একজন বললো, কিছুক্ষন আগেও ওরা বেঁচে ছিল। একটা শরীরের সামনে এসে আল আমিন দাঁড়িয়ে যায়। যারা অথর শরীরগুলো বহন করে নিয়ে এসেছে তাদের মধ্যে একজন বললো,
‘ মারার যাওয়ার আগে মেয়েটা বলে গেছে তার স্বামীর নাম আল আমিন ‘
নয় তলা দালানের তাজরিন গামেন্টস এর ৬ষ্ট তলায় মরিয়ম কাজ করতো। আগুন লেলিহান শিখা থেকে বাচঁতে লাফ দিয়েছিল, নীচে শানের উপর পড়ে মাথা থেতলে গেছে।