শিউলি খাতুন

বয়ানদাতাঃ জরিনা বেগম (মা)    

পরিবারের সদস্যঃ রবিউল ইসলাম (ভাতিজা), সিয়াম (ছেলে - জন্ম ২০০৫), শিলা  (মেয়ে - জন্ম ২০০০),

শিউলি বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল, ধূলাউড়া প্রাইমারি স্কুলে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। বাসা থেকে প্রায় - কিমি হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। কার কাছে শুনেছিল, স্কুলে যাওয়ার পথে ব্রিজের মোড়ে ছেলেধরা থাকে, তারপর থেকে ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ১৯৯০ সাল নাগাদ ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। ২০০৫ সালে ক্যান্সারে স্বামী মারা যায়, তখন শিলার কোলে কয়েক মাসের শিশু সিয়াম, আর মেয়ের বয়স বছর। শিউলি বাপের বাড়ি ফিরে আসে, মা ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শুরু হলো শিউলির নতুন সংসার। বাপের বাড়িতে বিভিন্ন পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করতো, সে ভালো সুতার কাজ জানতো, তাছাড়া জমি ইজারা দেয়ার কাজও দেখা-শুনা করতো, খাজনা পেতো। স্বচ্ছলতা থাকলেও বৈধব্যর কারনে শিঊলির উপর পারিপাশ্বিক, অথনৈতিক সামাজিক চাপ দিন দিন বাড়তে থাকে, তাই সে কারোর উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ কর্মে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল, ছেলেমেয়েদের নিজের মত করে মানুষ করতে চেয়েছিল। সৎ ভাই রবি তার বউ তখন ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতো। তাদের দেখাদেখি শিউলিও যেতে চাইলো। মারে বললো, ”ভাই-ভাবী যাচ্ছে, আমিও যাই, না পারি তো চলি আসবো।মা বলে, ’ওমা, কেউ কাম পারে না, সে পারে। কামে খুব সিরিয়াস ছিলো।’  চাচাতো ভাই জুলহাস তাজরীন গার্মেন্টসে কাজ নেয়ার দুই মাস পর শিউলিও সেখানে হেলপার হিসাবে যোগদান করে।

২৪শে নভেম্বর অগ্নিকান্ডের সময় জুলহাস ফ্যাক্টরি ভিতর থেকে তার বাবাকে ফোন করেছিল। গাঁঘেষে ছিল শিউলি জুলহাসের পরিবারের বাড়ি, এখনো তাই। শিউলি সেদিন দুপুরে খেতে এসে কেন জানি তার মোবাইল ফোন আইডি কার্ড বাসায় ফেলে এসেছিল। জুলহাসের বাবার কাছ থেকে শিউলির পরিবার তাজরীনের অগ্নিকান্ডের কথা জানতে পারে, তৎক্ষনাত ভাতিজা মাসুদ রানা বোনের ছেলে মনিরুল ঢাকায় রওয়ানা দেয়। ২৫ নভেম্বর নিশ্চিন্তপুর প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় নিথর শরীরগুলো শায়িত, সাদা ব্যাগে মোড়া লাশগুলোর মুখ খুলে খুলে দেখতে মাসুদ রানার ভয় লাগছিল, চিনতেও পারছিল না। ছোটবেলায় টিউবওয়েলের সাথে ধাক্কা খেয়ে শিউলির সামনের দুটো দাঁত উচু হয়ে যায়, মাসুদ সেটা দেখে শিউলিকে চিহ্নিত করে। অগ্নিকান্ডের মাসখানিক আগে কুরবানী ঈদের ছুটিতে শিউলি বাসায় এসেছিল, তখনই সবার সাথে তার শেষ দেখা।

2022 © All Rights Reserved | Designed and Developed by decodelab