ফরিদা
বয়ানদাতার নামঃ আক্কাস (স্বামী)
ফরিদা ফরিদপুর জেলার মধুখালি ইউনিয়নের বনদরিয়া গ্রামের মেয়ে। ওরা দুই বোন, ফরিদা কনিষ্ঠতম। পড়াশুনা তেমন করা হয়নি, শুধুমাত্র স্বাক্ষর জ্ঞান ছিল। ২০০৪ সালের দিকে আক্কাসের সাথে ফরিদার বিয়ে হয়। স্বামী জাত ব্যবসায়ী, যেখানে ব্যবসার সম্ভাবনা, সেখানেই তার বিচরন। নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন গার্মেন্টসের আশেপাশেই আক্কাসের লাকড়ির দোকান ছিল। ফ্যাক্টরীর উল্টাদিকের বাজারের শেষমাথায় মসজিদের আগে শাহজাহান মোল্লার বাড়ীতে তারা ভাড়া থাকতো। আক্কাসের দোকানে তাজরিনের সুপারভাইজার ও অন্যান্যরা আসতো, কথা প্রসঙ্গে ওরা আক্কাসকে বলে ”ভাবী সারাদিন বাসায় থাকে, তাজরিনে ঢুকে যাক, তাতে সময়ও কাটবে, বাড়তি আয়ও হবে”। বছরখানিকও তাজরিনে কাজ করেনি, তার আগেই ২৪শে নভেম্বর ২০১২ এর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ফরিদার মৃত্যু হয়। সেদিনের কথা মনে করে আক্কাস বলে, ”তখন মাগরিবের আযান দিচ্ছে, জামাতে দাঁড়িয়েছি, নামাযের মধ্যে শুনছি আগুন লাগছে, আগুন! ফরিদাকে ফোন দিয়েছিলাম, ধরেনি। ফ্যাক্টরির সামনে গিয়ে দেখি, বিল্ডিং এর ভিতর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা বের হচ্ছে। অনেক লোককে ফ্যাক্টরি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম।”
ফরিদা ফ্যাক্টরির ৪র্থ তলায় কাজ করতো। ২য় ও ৬ষ্ঠ তলার গেটে তালা লাগানো থাকায় ৩-৫ তলার শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। নিশ্চিন্তপুর স্কুল মাঠে সারি সারি লাশের মধ্যে আক্কাস ফরিদার নিথর শরীর চিহ্নিত করে। শরীরের কোন অংশ পুড়ে যায়নি, তবে কালো ধোঁয়ায় সারা মুখ কালিমাখা ছিল। হয়তো ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে অন্য অনেকের মত ফরিদাও দুনিয়া থেকে চলে গেছে, রেখে গেছে ৬ বছরের মেয়ে শান্তা ও ৮ বছরের ছেলে শান্তকে।