জুলেখা বেগম
বয়ানদাতাঃ রেশমা, ফরিদা, জ্যোতি (বোন)
পরিবারের সদস্যঃ রেশমা, ফরিদা, জ্যোতি, বুলবুলি, রওশন আরা (বোন), আব্দুল জলিল (বাবা)
জুলেখা ৬ বোনের মধ্যে ২য়, দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করায় লেখাপড়া তেমন করা হয়নি, শুধুমাত্র স্বাক্ষর জ্ঞানটুকু ছিল। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, কিন্তু সেই বিয়ে ২ বছরও টেকেনি। একটা ছেলে হয়েছিল, কিন্তু জন্মের পরপরই নবজাতকের মৃত্যু হয়। ভূমিহীন বাবা মাটির পাতিল কেনা-বেচার ব্যবসা করতো। বাপের বাড়ী ফিরে এসে জুলেখা অন্য বোনদের মত যে কাজই পেতো তাই করতো। ২০০৩ সালের দিকে জুলেখা ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ নেয়, তাজরীনে কাজ করেছে ৫ বছর, শেষ পদ ছিল মেশিন অপারেটর, বেতন ৯০০০ টাকা। চাচাতো বোন বিলকিস গার্মেন্টসে কাজ করতো। জুলেখার গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডে খালাতো ভাইয়ের ফোন নম্বর লেখা ছিল, কেউ একজন সেই নম্বরে ফোন করে জুলেখার মৃত্যুর কথা জানায়, সে গ্রামে ফোন করে সবাইকে জানায়। জুলেখার নাকে-মুখে রক্ত এসেছিল, পায়ে আচঁরের দাগ ছিল।
অগ্নিকান্ডের মাসখানিক আগে জুলেখা কুরবানির ছুটিতে গ্রামে এসেছিল। বোনজিদের সাথে খেলাধূলা করেছিল। ঊঠানে বসে মা জুলেখার চুলে উকুন তুলে দিচ্ছিল, তখন সে বলে, ”দেখ মা, আমার চুল পেকে গেছে না, আমার মরার চিঠি চইলে আসছে।” জুলেখা খুব নামাজী ছিল, সে পরিবারের সবার জন্য খুব চিন্তা করতো। বাসা এসে যখন দেখতো বাবা ছোট বোনটারেও কাজে লাগিয়ে আয় করাছে তখন সে বাবার সাথে খুব রাগ করতো, ”সারাজীবন আমরাও কাজ করে তোমারে খাওয়াছি, এখন ছোট মাইটারেও গতরে কাম করাইতোছো।” মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ২৬ বছর। দুই বছর আগে দীর্ঘ দিন নানা জটিল রোগে ভোগার পর জুলেখার মাও মারা গেছে।